প্রচ্ছদ > রাজনীতি > অন্যান্য

বাংলাদশ জামায়াতে ইসলামী ও লেবার পার্টির মতবিনিময় সভা

article-img

 বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি-এর সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্র সংস্কার, অর্থনীতি শক্তিশালী, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গণহত্যার বিচার এবং দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মতবিনিময় সভায় বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে চান মর্মে কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে বলেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এসব সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।

পত্রিকায় এসেছে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার গত দেড় দশকে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ রেখে পালিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা। তারা দেশের গোটা অর্থব্যবস্থাকে লুটপাট করে তলাবিহীন ঝুঁড়িতে পরিণত করেছে। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সকল সেক্টরে দুর্নীতি বন্ধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা ভিন্ন ধর্মালম্বীদের উপর হামলা করে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। তাদের এসব চক্রান্ত বন্ধ করার জন্য রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে গুলি চালিয়ে হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের নির্দেশে যারা গুলি চালিয়েছে তাদের শনাক্ত করে গণহত্যার বিচার করতে হবে। এ আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ। তারা কোথায় কী অবস্থায় আছে যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত সংখ্যা দেশবাসীকে জানাতে হবে এবং তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের জন্য তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তারা আমাদের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। ছাত্রআন্দোলনের এ ঐতিহাসিক বিজয়কে অর্থবহ করার জন্য এবং আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা জাতিকে বিভক্ত করতে চাই না। কিন্তু অপরাধীদের বিচার হতে হবে। শেখ হাসিনার পরিণতি থেকে আমাদের সকলকে শিক্ষা নিতে হবে।

মতবিনিময় শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা একসাথে বসে কথা বলেছি এবং দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে আগামী দিনে কী করতে পারি সে বিষয়ে আমরা পরামর্শ করেছি। আমরা দেশের জন্য রাজনীতি করি। আপামর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাদেরকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন, তাদের পরিবাকে ধৈর্য ধরার তাওফিক দান করেন। যারা আহত হয়েছেন আল্লাহ তায়ালা যেন তাদেরকে সুস্থতার নেয়ামত দান করেন। আমরা দীর্ঘদিন এক সাথে কাজ করেছি, আগামীতেও করব। দেশের জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমরা মিলেমিশে সহযোগিতার ভিত্তিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাথে আমাদের পথচলা নতুন নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসাথে কাজ করেছি। বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামী আন্দোলনের সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর অবদান অনস্বীকার্য। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার জামায়াতে ইসলামীর ওপর চরম অন্যায় অবিচার করেছে। দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ জালিম আওয়ামী সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। আর এর নেতৃত্ব দিয়েছে শেখ হাসিনা। সকল গুম, খুন, হত্যার বিচার করতে হবে। বাংলাদেশ তারণ্যের হাত ধরে এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মুহাম্মদ মোবারক হোসাইন।

আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জহুরা খাতুন জুঁই, হিন্দুরত্ম রামকৃষ্ণ সাহা, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি তরিকুল ইসলাম সাদী, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, মো. আব্দুর রহমান, দফতর সম্পাদক মো. মিরাজ খান, কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মাজহারুল হক, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের সভাপতি সৈয়দ মো. মিলন, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল ইসলাম মামুন প্রমুখ।